TOP BANGLA WEBSITE

WHAT'S NEW?
Loading...

জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে

প্রত্যেক মানুষই মৃত্যুর মিছিলে নীরব যাত্রী। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সবাইকে সেই শুভযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। কেউ জানেন না কার, কোথায়, কীভাবে মৃত্যু হবে। মানুষের মৃত্যুর স্থান ও সময় জানেন শুধু রাব্বুল আলামিন। মৃত্যুকে নিয়ে মানুষ অনেক ভেবেছেন কিন্তু কেউই মৃত্যু থেকে রেহাই পাননি। মৃত্যুকে ঠেকানো পৃথিবীর কারও ক্ষমতা নেই মহান আল্লাহ ব্যতীত। দুনিয়ার সব দার্শনিক ও বিজ্ঞানী সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন মানুষ মরণশীল। আসলে দুনিয়া হচ্ছে মুসাফিরখানা। আমরা সবাই মুসাফিরখানার স্বল্পকালীন বাসিন্দা। সবাইকে অস্থায়ী বাসস্থান থেকে চিরবিদায় নিয়ে পরকালের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন-
“জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে” [সুরা আম্বিয়াঃ৩৫]
আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,
"প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়"।(সূরা আল ইমরান):১৮৫
আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,
"তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না"। (সূরা আন নিসা):৭৮
আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করেছ, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখোমুখি হবে। (সূরা জুমআ : ৮)
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহতায়ালা কাউকে অবকাশ দেবেন না। (সূরা মুনাফিকুন : ১১)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদের ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উঠাব। (সূরা ত্বহা : ৫৫)
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মৃত্যু বাক্যটি ১০৮টি আয়াতে ১১৮বার উচ্চারিত হয়েছে)
প্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগে মানুষ কত কিছুই তো জানে। বিজ্ঞানীরা কত কিছুর সূত্রই তো আবিষ্কার করেন, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি দিয়ে নাকি পৃথিবীর কোনো কোনো উন্নত দেশ সারা পৃথিবীর সবখানেই নজর রাখে, আবার কোনো কোনো দেশের দাবি মহাসাগরে একটি বল ভাসলেও তাদের রাডারে তা ধরা পড়ে, মানুষ মঙ্গলগ্রহে বসত গড়ছে, বোতাম টিপে হাজার মাইল দূর থেকে নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে অব্যর্থ মিসাইলের আঘাত হানছে, অথচ এতসব প্রযুক্তি আর জ্ঞান-বিজ্ঞান এখনো আল্লাহর সেই ১৪ শত বছর আগের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেনি। কে কবে মারা যাবে তা উদ্ধারের কোনো প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। কোনো মানুষ জানে না কে কখন মারা যাবে।
আল্লাহর ভাষায় :
‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’ {সূরা লুকমান, আয়াত : ৩৪}
আরেক সূরায় আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেন,
‘অতঃপর যখন বিকট (কিয়ামত দিবসের) আওয়াজ আসবে, সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে, তার মা ও তার বাবা থেকে, তার স্ত্রী ও তার সন্তান-সন্ততি থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকেরই একটি গুরুতর অবস্থা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। সেদিন কিছু কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে। সহাস্য, প্রফুল্ল। আর কিছু কিছু চেহারার উপর সেদিন থাকবে মলিনতা। কালিমা সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে।’ {সূরা আবাসা, আয়াত : ৩৩-৪১}
মৃত্যুর জগৎ বিচিত্র। মানুষ বিভিন্নভাবে মৃত্যুবরণ করছে। কবরে যাওয়ার পরই দুনিয়ার সঙ্গে সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। প্রথম কয়েকদিন আত্মীয়-স্বজন শোকে-দুঃখে মর্মাহত থাকেন। কেউবা চল্লিশ দিন শোক পালন করে। মৃত্যুর স্মৃতিচারণ করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে দুঃখ মুছে যায়। তারপর সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কবরে যাওয়ার পর কেউ আর কারও আপন থাকে না। মৃত ব্যক্তি কোনো কিছু নিয়ে কবরে যেতে পারবেন না, নেক আমল ছাড়া। কাজেই নেক আমলের ব্যাপারে আমাদের সবাইকে জীবিত থাকতেই গুরুত্ব দিতে হবে।
এ দুনিয়ায় জীবনটাই কি একমাত্র জীবন, না এরপরেও কোন জীবন আছে? অর্থাৎ মরণের সাথে সাথেই কি মানব জীবনের পরিসমাপ্তি, না তারপরেও জীবনের জের টানা হবে? মানব মনের এ এক স্বাভাবিক প্রশ্ন এবং সকল যুগেই এ প্রশ্নে দ্বিমত হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে দুই বিপরীতমুখী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।মানুষ ভূমিষ্ঠ হবার পর কিছুকাল দুনিয়ায় অবস্থান করতঃ বিদায় গ্রহণ করে। এ অবস্থানকাল কারো কয়েক মুহূর্ত মাত্র। কারো বা কয়েক দিন, কয়েক মাস, কয়েক বছর। আবার কেউ শতাধিক বছরও বেঁচে থাকে। কেউ আবার অতি বার্ধক্যে শিশুর চেয়েও অসহায় জীবনযাপন করে।
বেঁচে থাকাকালীন মানুষের জীবনে কত আশা-আকাঙ্খা, কত রঙিন স্বপ্ন। কারো জীবন ভরে উঠে অফুরন্ত সুখ সাচ্ছন্দে, লাভ করে জীবনকে পরিপূর্ণ উপভোগ করার সুযোগ-সুবিধে ও উপায়-উপকরণ। ধন-দৌলত, মান-সম্মান, যশ ও গৌরব – আরও কত কি। অবশেষে একদিন সবকিছু ফেলে, সকলকে কাঁদিয়ে তাকে চলে যেতে হয় দুনিয়া ছেড়ে। তার তাখতে-তাউস, বাদশাহী, পারিষদবৃন্দ, উজির-নাজির, বন্ধু-বান্ধব ও গুণগ্রাহীবৃন্দ, অঢেল ধন-সম্পদ কেউ তাকে তাকে ধরে রাখতে পারেনি আর কেউ পারবেও না ভবিষ্যতে। রাজা-প্রজা, ধনী-গরীব, সাদা-কালো সবাইকেই স্বাদ গ্রহণ করতেই হয় মরণের।
যে মরে গেল তার আমল করার সুযোগ চিরতরে শেষ হয়ে গেল। মৃত্যু আমাদের জীবনে যে কোনো সময় চলে আসতে পারে কোনো নোটিশ ছাড়াই। এ কঠিন সত্যটাকে যেন আমরা ভুলে না যাই। এ সম্পর্কে হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘তোমরা যাবতীয় স্বাদ বিনষ্টকারী বিষয়টিকে বেশি বেশি করে স্মরণ কর। সেটা হচ্ছে মৃত্যু।’ (তিরমিজি)
মৃত্যু ও আখিরাতকে ভুলে যাওয়া আর দুনিয়ার ধোঁকাবাজিতে পড়ে থাকা চরম বোকামি ছাড়া কিছু নয়। প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মুমিনদের মধ্যে সর্বাধিক বুদ্ধিমান কে?’ তিনি ইরশাদ করলেন, ‘যে সর্বাধিক পরিমাণ মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সদা সচেষ্ট, এ ধরনের লোকেরাই প্রকৃত বুদ্ধিমান।’ (ইবনে মাজাহ)
আমরা সাধারণত কথাবার্তা ও আলোচনায় মৃত্যু বিষয়টিকে সাবধানতার সঙ্গে এড়িয়ে যাই। এমন ভীতিজনক বিষয় মুখে উচ্চারণ করতে চাই না। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত্যু নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করে নসিহত হাসিল করা দরকার। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে রাসুল (সা.)-এর উপস্থিতিতে আলোচনা হচ্ছিল। তার বহুবিদ সুকর্মের প্রশংসা করা হচ্ছিল। তা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সেই লোকটি কি মউতের কথা স্মরণ করতো?’ তারা বললেন, ‘মৃত্যু সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন বলে কখনও শুনিনি।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে সেথায় নেই।’ অর্থাত্ মৃত্যুর ব্যাপারে সচেতন না থাকলে, কোনো ব্যক্তি কল্যাণ অর্জন অব্যাহত রেখেছে এমন চিন্তার অবকাশ নেই। কিছু কিছু সময় আমরা মৃত্যুর কথা আলোচনা করেও থাকি। কিন্তু গাফেল হৃদয়করণ থেকে আসার কারণে তা হৃদয়ে কার্যকর প্রভাব ফেলে না। সাহাবি হজরত আবু দারদা (রা.) সে বিষয়টিকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘মৃতদের কথা আলোচনা হলে, তুমি নিজেকে তাদের মধ্যে গণনা কর।’
কিন্তু ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার প্রবল আকর্ষণ চারদিক থেকে আমাদের এমনভাবে ঘেরাও করে ফেলেছে যে, মৃত্যু এবং আখিরাত সম্পর্কে ভুলে গেছি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘এ পার্থিব জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়, পরকালীন জীবনই হলো প্রকৃত জীবন।’ এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে বিষয়টি শঙ্কিত, সেটা হচ্ছে নফসের খায়েশ আর লম্বা লম্বা আশা। নফসের খায়েশ মানুষকে হক থেকে গোমরাহ করে ফেলে। আর লম্বা লম্বা আশা-আকাঙ্ক্ষা মানুষকে আখিরাত থেকে ভুলিয়ে দেয়। (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)।
অপর হাদিসে আছে, নবী করিম (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করতে চাও?’ তারা বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে আশা-আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দাও। মৃত্যুকে তোমাদের চোখের সামনে রাখ। আর আল্লাহর সামনে সঠিকভাবে লজ্জিত হয়ে (গোনাহসমূহ থেকে দূরে) থাক।’ মৃত্যুর পরবর্তী জীবনই আখিরাত বা পরকাল। আর এ জীবনই প্রকৃত জীবন। দুনিয়াতে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা দুটি কারণে হয়ে থাকে। প্রথমত, দুনিয়ার প্রতি মোহ অর্থাত্ পার্থিব জীবনের সম্পদ, আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাসের আকর্ষণ।
আখিরাতকে ধোঁকা দিয়ে বলতে থাকে, এত সকাল আখিরাত সম্পর্কে চিন্তা করার দরকার নেই। জীবনে অনেক সময় রয়েছে, বয়স্ক হলে এসব চিন্তা করা যাবে। এভাবে একটি ঝামেলা শেষ হওয়ার আগেই আর একটি ঝামেলা এসে পড়ে, আর এভাবেই একদিন মৃত্যুর পরওয়ানা হাজির হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, অনেকেই ধোঁকায় পড়ে যায় যে, আমি তো এখনও বুড়ো হইনি। কাজেই এ মুহূর্তে মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই। প্রত্যেক মানুষের মনে আশা এমন যে, এত তাড়াতাড়ি কি মরে যাব? যদিও অনেক মানুষ বৃদ্ধ হয়ে মারা যায়, কিন্তু বৃদ্ধ হওয়ার আগেই কিশোর-যুবক থাকাবস্থায় কি অসংখ্য লোকের মৃত্যু ঘটছে না? এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি সকাল করবে, সন্ধ্যাবস্থা পর্যন্ত নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকবে, এমন আশা করো না। আর যখন সন্ধ্যা করবে, সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবে—এমন নিশ্চিত আশা করে থেকো না।’ (বোখারি)।
মনে রাখতে হবে, মৃত্যু মানে শুধু পরপারে পাড়ি জমানো নয়, মৃত্যু মানে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো। আজ যার মৃত্যু হল, এতদিন সে পৃথিবীতে স্বাধীন ছিল। যখন যা ইচ্ছা করার শক্তি ছিল, ন্যায়-অন্যায়, ফরমাবরদারী-নাফরমানী সবকিছুর সমান ক্ষমতা ছিল। সে কি আল্লাহর পূর্ণ ফরমাবরদার ছিল, না অনেক নাফরমানীও তার দ্বারা হয়েছে? প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে গুনাহর কাজ হয়েছে? আজ আল্লাহ তাকে ডাক দিয়েছেন হিসাবের জন্য। এ ডাকে সাড়া না দেওয়ার উপায় নেই। স্বজন-প্রিয়জনদের সাধ্য নেই, তাকে কোথাও লুকিয়ে রাখে।
মৃত্যুর ভাবনাই আমাদের জীবন সম্পর্কে সচেতন হতে ও এই জীবনকে একটি ক্ষণস্থায়ী আবাসভূমি হিসেবে বিবেচনা করতে সহায়তা করে। এই দুনিয়া তো একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র যেখানে ক্ষণে ক্ষণে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। এই পরীক্ষার পরিসমাপ্তিই হল মৃত্যু। অতএব দুনিয়ার প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে কিভাবে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সীমালঙ্ঘন করতে পারি। এটি এমন একটি বাধা হিসেবে কাজ করে যা সকল প্রকার সীমালঙ্ঘন হতে আমাদের রক্ষা করে। এবং দুনিয়ার ধোঁকা হতে আমাদের হেফাজত করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ
“ভাল করে জেনে রেখো যে, “ পার্থিব জীবন ক্রিয়া কৌতুক, সাজসজ্জা, পারসপারিক অহমিকা, ধন ও জনের প্রাচুর্য্ ব্যতীত আর কিছুই নহে।পার্থিব জগত প্রতারণার স্থান বইতো আর কিছুই নয় ” সুরা হাদীদঃ ২০
মৃত্যু ও জানা সম্পর্কিত কিছু তথ্য :
কেউ মারা গেলে কোন শ্রেণীর প্রচার নিষিদ্ধ? মাইকিং করা কি বৈধ?
যে শ্রেণীর প্রচার জাহেলী যুগে ছিল। জাহেলী যুগে উঁচু মিনারে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করা হত। ৪৬৮ (আলবানী) সুতরাং মাইকে ঘোষণা করা উক্ত শ্রেণীভুক্ত।
মৃতব্যক্তির শোকে মাতাম করে কান্না করা বৈধ কি?
না। কেউ মারা গেলে ওয়াজেব হল বিধির বিধান মেনে নিয়ে শোক দমন করে ধৈর্যধারণ করা। স্বাভাবিকভাবে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে যাওয়াও দোষাবহ নয়। দোষাবহ হল মাতাম করে ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না করা।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “লোকের মধ্যে দুটি এমন দোষ রয়েছে, যা আসলে কাফেরদের (আচরণ) বংশে খোটা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য মাতাম করা।” ৪৬৯ (মুসলিম)
মহানবী (সঃ) বলেছেন, “মৃত ব্যক্তিকে তার কবরের মধ্যে তার জন্য মাতাম করে কান্না করার দরুন শাস্তি দেওয়া হয়।” ৪৭০ (বুখারী ও মুসলিম)
আবূ বুরদাহ বলেন, একদা (তার পিতা) আবূ মূসা আশআরী (রঃ) যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। আর (ঐ সময়) তার মাথা তার স্ত্রীর কলে রাখা ছিল এবং সে চিৎকার করে কান্না করতে লাগল। তিনি (অজ্ঞান থাকার কারণে) তাকে বাঁধা দিত পারলেন না। সুতরাং যখন তিনি চেতনা ফিরে পেলেন, তখন বলে উঠলেন, ‘আমি সেই মহিলা থেকে সম্পর্কমুক্ত, যে মহিলা থেকে আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) সেই মহিলার থেকে সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন, যে শোকে উচ্চস্বরে মাতম করে কান্না করে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।’ ৪৭১ (বুখারী ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “ মাতামকারিনী মহিলা যদি মরনের পূর্বে তওবাহ না করে, তাহলে আল-কাতারের পায়জামা এবং পাঁচড়ার জামা পরিহিতা অবস্থায় তাকে কিয়ামতের দিনে দাঁড় করানো হবে।” ৪৭২ (মুসলিম)
কবরের উপরে কবরবাসীর নাম ও মৃত্যু তারিখ সহ কোন আয়াত বা কবিতা লেখা কি শরীয়ত সম্মত?
না। জাবের (রঃ) বলেন, ‘নবী (সঃ) কবর পাকা করতে, তার উপর বসতে এবং তার উপর ইমারত নির্মাণ করতে বারণ করেছেন।’আবূ দাঊদ ও নাসাঈ প্রভৃতির বর্ণনায় আছে,
তার উপর লেখাও নিষেধ করেছেন।’ ৪৭৪ (ইবনে বায)
কবরস্থানের গাছ রোপণ করা বৈধ কি?
না। কবরস্থানে ফুল, ফল বা অন্য কিছুর গাছ লাগালে প্রথমতঃ তা পার্কের মতো হয়ে যায়। ফলে আখেরাত স্মরনের জায়গায় দুনিয়ার সৌন্দর্য ও আকর্ষণই সৃষ্টি করে সেই উদ্যান-সদৃশ পরিবেশ। দ্বিতীয়তঃ তাতে খ্রিষ্টানদের [নাসারা] সাদৃশ্য অবলম্বন হয়। (ইবনে উসাইমীন)
কোন আত্মীয় মারা গেলে, তার শোকে কালো কাপড় পড়া কি শরীয়তসম্মত?
কারোর জন্য শোক পালনে কালো কাপড় পড়া শরীয়তসম্মত নয়। স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্যও তা বিধেয় নয়। আত্মীয় মারা গেলে মহিলারা তিনদিন পর্যন্ত শোক পালন করতে পারে। আর স্বামী মারা গেলে ৪ মাস ১০ দিন শোক পালন করা ওয়াজেব। অবশ্য গর্ভবতীর ইদ্দত প্রসবকাল পর্যন্ত। এই সময় কোনও সুগন্ধি, অলঙ্কার ও সৌন্দর্যময় পোশাক ব্যবহার করতে পারবে না। সাদা কাপড়ে সৌন্দর্য থাকলে তাও ব্যবহার করা বৈধ নয়।
কোন নবী অলীর কবর যিয়ারতের জন্য সফর করা কি বৈধ?
বরকতময় তিনটি মসজিদ (অনুরূপ কুবার মসজিদ)ছাড়া বরকত ও সওয়াবের উদ্দেশ্যে অন্য কোন মসজিদ, মাযার বা ঐতিহাসিক স্থান যিয়ারত করার জন্য সফর নিষেধ। আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বলেছেন, “তিনটি মসজিদ ছাড়া সফর করা যাবে না, (মক্কার) মসজিদে হারাম, (মদিনার) আমার এই মসজিদ এবং (জেরুজালেমের) মসজিদে আকসা।” ৪৭৬ (বুখারী-মুসলিম)
সুতরাং যে ব্যক্তি মদিনা যাবে, তার কবরে নববীর যিয়ারত যেন উদ্দেশ্য না হয়। মসজিদে নববীর যিয়ারতের নিয়তে গিয়ে কবর কবর যিয়ারত করবেন। বৈধ নয় কোন আলী-আওলিয়ার কবর বা মাযার দূর থেকে যিয়ারত করতে আসা। অবশ্য তার সাথে যদি কোন অন্য অবৈধ আশা বা চাহিদা থাকে, তাহলে নীতি অনুযায়ী তা বিদআত বা শিরক হবে।
মসজিদের এরিয়ার ভিতরে কোন বুযূর্গকে দাফন করা কি বৈধ?
না। মসজিদের এরিয়ার ভিতরে কবর দেওয়া বৈধ নয়, বৈধ নয় কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা। আল্লাহ্‌র রাসূল (সঃ) মৃত্যুশয্যায় বলে গেছেন, “আল্লাহ ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে অভিশাপ (ও ধ্বংস) করুন। কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদা ও নামাযের স্থান) বানিয়ে নিয়েছে।” ৪৭৯ (বুখারী, মুসলিম ৫২৯ নং, নাসাঈ)
সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়ো না। এরূপ করতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি।’ ৪৮০ (মুসলিম ৫৩২ নং)
যেহেতু এ কাজ শিরকের ছিদ্রপথ, সেহেতু তাতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর এই যে, মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লহর সাথে তোমরা অন্য কাউকেও ডেকো না।” (জ্বিনঃ ১৮)

0 comments:

Post a Comment